সমান্তরাল সুর- অনির্বাণ






বাঁশি খুব জোরালো অথচ মিঠে সুরে অনেকক্ষণ ধরে বাজাচ্ছে কেউ চোখের সামনে ঝাপসা একটা পর্দা পর্দার ওপাশ থেকেই আসছে সুর ফেরার সময় হল একটা দীর্ঘশ্বাস কতকিছু লুকিয়ে রাখে ভিতরে ফিরতে হবে এবার

1

ঘামে ভিজে উঠে বসলো অরণ্য বেশ কিছুদিন ধরেই আসছে স্বপ্নটা আর এক আশ্চর্য মনখারাপ মিশে থাকে ওই দীর্ঘশ্বাসেঘুম ভেঙে ওঠার অনেকক্ষণ পরেও থেকে যায় যেন খুব বড় কিছু পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হচ্ছে অনিচ্ছায় মুখে চোখে জল দিয়ে ছাদে সকাল পুরোপুরি রোদ নিয়ে আসেনি এখনো একজন দুজন করে লোকজন সবে জাগতে শুরু করেছে আকাশ ঘন নীল খুব দূরের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে বাঁশির আওয়াজ প্রায়ই আসে এটার জন্যই বোধহয় স্বপ্নে বাঁশি শোনে সে বাজার করতে বেরোনোর সময়ও ওই বাড়ির সামনে দিয়েই যেতে হয় বাঁশি থামে না তখনো অনেকবার ভেবেছে কে বাঁশি বাজায় হরিহর বাবুর বাড়ি বাবার সাথে আলাপ থাকলেও অরণ্যের সাথে আলাপ নেই তেমনতাই দুম করে জিজ্ঞাসা করা যায় না তবে যেই বাজাক খুব সুন্দর বাজায় ছেলেবেলায় মা বলতো যারা ভোরে বাঁশি বাজায় তারা পাখিদের ঘুম থেকে তোলে তারপর সকালকে জাগানোর দায়িত্ব নেয় পাখিরা অনেকদিন পর কথাটা মনে পড়লো একদিন দেখা হলে জিজ্ঞাসা করা যাবে বাঁশিওয়ালা কে সেও পাখিদের ঘুম ভাঙায় কিনা এসব কথা মনে পড়লেই ফোনে হাত চলে যেত আগে কথাগুলো বলার জন্য ছটফট করতে হত রিং বেজে বেজে কেটে যাওয়ার ঠিক আগে ফোনটা রিসিভ হত 'ফোন বাজলেই ধরতে পারিস না?'

' না তাহলে তোকে আর রাগানো যাবে কি করে?'

'ধুর এরকম কেউ করে নাকি কথা বলার ছিল '

' সেই তো বলবি কোন পাখি পালিয়েছে তাতে তুই খুশি অথবা আকাশের গায়ে নীলের গায়ে অদ্ভুত মেঘ '

' তো?তাতে কি? আমার বলতে ভালোলাগে তো'

' আচ্ছা বল বাবা বলকি হল আজ?'

আজকে হয়তো পাখিদের ঘুম ভাঙানোর কথা থাকতো শেষে 'তুই একটা আস্ত পাগল' বলে আজকেও হয়তো শেষে হেসে উঠতো অনন্যা ওই হাসিটা মনে পড়লে এখনো মনখারাপ হয়ে যায় নম্বরটা রয়ে গেছেসাথে ওর হাসিমুখের ছবিও শুধু আর স্ক্রিনে বারবার আসে না মানুষরা হারিয়ে যায় অথচ প্রথম কারো জন্য খুব সিরিয়াস হয়ে পড়েছিল অরণ্য চাকরি বাকরি নিয়ে ভাবনা চিন্তা না করা ছেলেটা একগাদা কোচিং সেন্টার, টিচার শুধু চাকরি পাওয়ার জন্য ভালো লাগতো না তবু চেষ্টা করছিল একটা ঠিকঠাক চাকরি বিয়ে সুখের নেশা আসলে রক্তের মধ্যে ঢুকে গেছে মানুষের একটু সুখের কল্পনা করে নিলেই অমানুষের মত খাটা যায় অনায়াসে খাটছিল অরণ্য পায়নি চাকরি কার্ড পেয়েছিল অনন্যার বিয়ের শেষের দিকে অনন্যা খুব বাজেভাবে বলতো ওকে ভালোলাগার জিনিসগুলোর দাম ছিলনা কোন ওর মনে হত চাকরির জন্য যথেষ্ট খাটছে না অরণ্য তাই ঠিক করে বিয়ের কথা বড়লোক বর আইটির চাকরি বিদেশ দীর্ঘশ্বাস পড়লো একটা বিকেলে বেরিয়ে হাত ধরে ওরা যেখানে বসতো সেখানে তার পরে অনেকবার গিয়ে বসতো অরণ্য ভাবতো কোনটা মিথ্যে ওই হাসি ওকে পাগল বলাটা? না শেষের দিকে বিদেশ আর বড়লোক বর নিয়ে করা গর্বটা বুঝতে পারা যায় না কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না শুধু প্রশ্নগুলো পড়ে থাকে ভালো সময়গুলো খারাপ সময়ের গায়ে জড়িয়ে আরো খারাপ করে তোলে তাকে সময় থামেনা নিজের মত এগিয়ে চলে

তবু এই সময়ে ফোনটা একবার হাতে নিল অরণ্য পুরোনো হয়ে যাওয়া নম্বর আর হাসিটা আবার স্ক্রিনে কল করবে? বাঁশি থেমে গেল হঠাৎ ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো অরণ্য আজ থাক শহর ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মনখারাপেরা ভিড় হলেই হারিয়ে যায়ওরা বড্ড মুখচোরা

2

Walker হাতে নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে চেষ্টা করে যাচ্ছে মা পায়ে ব্যথা তাই উঠতে পারছে না চোখের কোণে জল তবু চেষ্টা করছে কলকাতার কোন এক কাজ সেরে ফিরে এসে এটাই দেখলো অরণ্য বাবা কোথাও বেরিয়েছে যে আয়া আসার কথা সেও আসেনি তাড়াতাড়ি গিয়ে মা কে ধরলো সে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হচ্ছিল একটু ঠোঁটের কোণে হাসি মা কোনোদিন বোঝাতে চায়না ব্যথার কথা

'কোথায় গেছিলি?'

'কলকাতায় একটা ইন্টারভিউ ছিল'

' কেমন হল?খুব দূরে?'

মায়ের গলায় থরথর আবেগ এইসব প্রশ্নগুলোর কোন জবাব নেই অরণ্যের কাছে এই আবেগের জবাব দিতেই এখনো চেষ্টা করা পুরোনো কারণ তো মরে গেছে কবেই

'হলভালোই তুমি একা একা ওঠার চেষ্টা করছো কেন?'

এই প্রশ্নটাও অমূলক ভালো লাগে না মায়ের জানে ও যে ভদ্রমহিলা রোজ গাছের গায়ে কাঠবিড়ালিকে খাওয়াতে যেত, সকালে রাস্তায় মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে ঘুরে আসতো প্রায় গোটা পৃথিবী সেই ভদ্রমহিলা একটা বদ্ধ ঘরে বসে খালি টিভি দেখে এখন ভালো লাগে না কোনকিছু ঠিক হয়না ওর সাথে ঠিক করার মত ক্ষমতাও ওর নেই পুরোনো সময়ে যদি ফিরে যাওয়া যেত, যদি সব ঠিক হয়ে যেত আগেরমত শুধুমাত্র স্বপ্নে দেখে সে মা ঘুরে বেড়াচ্ছে অনন্যার সাথে গল্প করে হাসছে ও যেন খুব দূর থেকে দেখছে ওদের একদিনের জন্যও স্বপ্ন যদি সত্যি হত আয়া এসে গেছে মাকে আস্তে শুইয়ে আয়াকে খাইয়ে দিতে বললো মা কে খা খা রোদে একটা পাড়া নিজ্ঝুম হয়ে পড়ে আছে চুপ ছাদে দাঁড়িয়ে দুপুরের রোদ মেখে পাড়াকে কেমন যেন মনখারাপ করা লোকের মত লাগে যে কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারছে না পরীক্ষায় ফেল করে যাচ্ছে গুম হয়ে বসে ভাবছে ভুলটা ঠিক কোথায় আজ বাঁশির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে এখন সে তাহলে দুপুরেও বাজায় দুপুরে কোনোদিন ছাদে ওঠা হয়না আর বেশিরভাগ বন্ধুরা পাড়া ছেড়ে কলকাতায় চলে গিয়ে বাড়ি রেখে গেছে ওদের বাড়ির পাশের দুটো বাড়ি ফাঁকা তারপর অন্য একটা বাড়ি যাতে লোক ফাঁকা বাড়িগুলো যেন বসেই আছে বাঁশির আওয়াজ শুনতে কদিন পর এসব ভেঙে কংক্রিটের দৈত্য উঠবে তখন বোধহয় আর শোনা যাবেনা বাঁশির আওয়াজওতার আগে বন্ধুত্ব করে নিতে হবে বাঁশিওয়ালার সাথে কেমন যেন এই বাঁশি জড়িয়ে যাচ্ছে নিজের সাথেতাই

3

হরিহরবাবুর সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছে বাবা মিশুকে মানুষ অরণ্য বাঁশি শুনতে চেয়েছে শুনে নিজেই ওদের বাড়ি গিয়ে অরণ্য কে ডেকে এনেছেন বাঁশি ওনার মেয়ে বাজায় কথা বলতে পারেনা সে ছোটবেলায় পারতো পরে কোন এক অদ্ভুত অসুখে কথা বলার ক্ষমতা চলে গেছে তার মুখে কিছু শব্দ করতে পারে sign language বা লিখে বোঝায় কি বলতে চাইছে শুনে খারাপই লাগছিল অরণ্যের মানুষের কাছ থেকে কতকিছু চলে যায় হরিহরবাবু তবু শক্ত আছেন বেশ মেয়ের কাছে যাওয়ার আগে শুধু অরণ্য কে বলে দিলেন

'মেয়ে আমার একটু মুডি ধরো হঠাৎ দেখলে ও বাজানো বন্ধ করে দিল খারাপ ভাবে নিও না ও নিজের যখন ইচ্ছে হয় বাজায় এমনও হতে পারে এখন বললে ও বাজালো না হয়তো তাহলে তোমাকে পরে একদিন আসতে হতে পারে'

সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো অরণ্য ও এসবে কিছু মনে করে নাবাড়িটা অনেক বড় তিনতলার ছাদে ওনার মেয়ের ঘর পাশেই বিরাট বড় একটা ছাদ প্রায় ফুটবল গ্রাউন্ডের হাফ হরিহরবাবুর পয়সা আছে বেশমনে মনে ভাবল সে

'মা, কি করছিস? '

ঘরটা অদ্ভুত শান্তিমাখা এরকম আগে কখনো কারো ঘরে ঢুকে লাগেনি অরণ্যের গোছানো ঘর হালকা আলো জ্বলা ঘর অনেক দেখেছে অরণ্য কিন্তু ঘরের ভিতর ঢুকতেই কেমন ঠান্ডা হয়ে যায় মন অরণ্য এই নতুন ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছিল হরিহরবাবুর ডাকে সেই ঘোর ভাঙলো তার

'আমার মেয়ে জিজ্ঞাসা আর মা এ হল অরণ্য অনিল বাবুর ছেলে তোর বাঁশি শুনে ভালো লেগেছে ওরশুনতে এসেছে '

অবাক চোখে তাকালো মেয়েটি সাধারণ সুন্দরীদের মধ্যে একটা শ্রী থাকে যাতে তারা অসাধারণ সুন্দরীদের থেকে আলাদাভাবে সুন্দর হয়ে ওঠে মেয়েটিও তাই বিশেষ করে চোখ দুটো অস্বাভাবিক সুন্দর বাবাকে হাত নেড়ে কিসব বলতে ওর দিকে চেয়ে হরিহর বললেন,

'একটু বাদে ও বাজাবে বলছেতুমি শুনতে চাওয়াতে ও খুব খুশি একটু বসলে তোমার অসুবিধা হবে কিনা জানতে চাইছে '

কোন অসুবিধা নেই জানাতে ওকে একপাশের সোফা দেখিয়ে দিলেন হরিহর নিজে কিছু জলযোগের ব্যবস্থা করতে নীচে গেলেন একটু বাদে শুরু হল বাঁশি একটা অদ্ভুত দুঃখমেশানো সুর ছড়িয়ে গেল যেন ঘরের চারপাশে সোফায় হালকা হেলান দিয়ে শুনতে শুনতে অরণ্য দেখলো মেয়েটির চোখ বোজা অরণ্য ও চোখ বুজলো ওর মনে পড়ে যাচ্ছে সব দুঃখ সব খারাপলাগা বাঁশির সুর বদলে গেল হঠাৎ আনন্দ খেলা করছে সুরে অনন্যার হাসি হাত ধরে অনেকটা পথ হাঁটা ইয়ার্কি মায়ের হাসি একটা কাঠবিড়ালি মায়ের কাঁধে বসে এত আনন্দ অনেকদিন হয়নি অরণ্যের চোখ বুঁজে বসে বসে বুঝতে পারছিল চোখের কোণে জল একসময় থেমে গেল সব ফাঁকা লাগছে খুব চোখ খুলে দেখলো হরিহর দাঁড়িয়ে সামনে টেবিলে খাবার

'তোমাকে ডিস্টার্ব করতে চাইনিতাই ডাকিনিখেয়ে নাও একটু'

মৃদু হাসলো অরণ্য সোফা থেকে উঠে মেয়েটির হাত ধরে বললো

'অনেক ধন্যবাদ অনেক অনেক ধন্যবাদ'

মেয়েটি অবাক চোখে তাকিয়ে একটু হাসল হরিহরের দিকে হাত নেড়ে কিছু একটা বললো হরিহরও হাত নেড়ে কিছু বলতে অরণ্যর হাতে একটু চাপ দিয়ে মাথাটা ঝোঁকাল অভিবাদনের ভঙ্গিতে হরিহর বললেন

'ওকে বুঝিয়ে দিলাম তুমি ধন্যবাদ বলেছ ও খুশি সেটাই জানাচ্ছে তোমাকে এবার এস খেয়ে নাও'

সোফায় হরিহরের সাথে বসতে গিয়ে পিছন ঘুরে ও দেখলো মেয়েটি বিছানায় বসে ওর দিকে তাকিয়ে শান্ত সে দৃষ্টি কিন্তু করুণ

বাড়ি ফিরতে ফিরতে সে ঠিক করলো আবার আসতে হবে বাঁশি শুনতে এরকম আনন্দ অনেকদিন হয়নি ভরা ভরা লাগছে প্রাণ

4

বহুদিন হল হরিহরবাবুর বাড়ি আসা এখন ও প্রায় বাড়ির ছেলের মতনই হয়ে গেছে জিজ্ঞাসার সাথেও গল্প হয় প্রচুরতবে নিজের ব্যাপারে আড়ষ্ট থাকে সে অরণ্যের ব্যাপারে আগ্রহ যদিও খুবঅনন্যা, বাড়ি, মা , চাকরির বেহাল দশা -সবই জেনে ফেলেছে কদিনে এমনকি ওর সাথে কথা বলার সময় জিজ্ঞাসা যে বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করে সেটাও বোঝে অরণ্য শুধু একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করেছে সে হরিহরবাবুর ব্যাপারে একদম বেশি কথা বলতে চায়না জিজ্ঞাসা এমনকি প্রশ্ন করলেও এড়িয়ে যায়অদ্ভুত ব্যাপার অবশ্য আরো আছে প্রতিদিন জিজ্ঞাসার বাঁশি বাজানোর সময়ে হরিহর বাবু ছাদের অন্ধকার দিকে চলে যান ফেরেন বাঁশি শেষ হলে আগে সে ভাবতো দুঃখের সুর শুনে ওনারও হয়তো পুরোনো স্মৃতি জেগে ওঠে এ হয়তো এক ধরণের দুঃখযাপন কিন্তু জিজ্ঞাসা বেশিরভাগ দিনই বাঁশিতে আনন্দের সুর তোলে ওই সময়টুকু ওনার দেখা পাওয়াই মুশকিল ওনার সাথে কথা হলে সে বাড়িতে ঢোকার মুখে আর বেরোনোর সময়ে বাকি সময় উনি যেন অদৃশ্য ঠিক বাঁশি বাজানোর সময় জিজ্ঞাসাও আজকাল যেন কিছু ওকে বলতে চায় পারে না কিন্তু ওর চোখে যেটা লেগে থাকে সেটা যে ভয়,সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারে অরণ্য অন্য সময়ে অনেকবার জিজ্ঞাসা করতে গেছে সে লিখেকারণ sign language বুঝতে পারে না সে এড়িয়ে যায় জিজ্ঞাসা বাপ মেয়ের সম্পর্কের সমীকরণে কোন বড় গোলযোগ আছে হয়তো তাই বেশি প্রশ্ন করেনা অরণ্য শুধু একদিন জিজ্ঞাসা কে বেশি চিন্তিত দেখে ওকে লিখেছিল

'বাঁশি বাজানোর আগে লিখে রেখে দেবে কি বলতে চাইছো আমি তাহলে পড়ে নেব ওইসময়'

আজ জিজ্ঞাসা বাঁশি বাজাতে শুরু করার পর যখন দেখল হরিহর মিলিয়ে গেলেন অন্ধকারে সোফা থেকে আস্তে উঠে সে জিজ্ঞাসার বিছানার কাছে গেল দেখল টেবিলে জিজ্ঞাসার লেখা কাগজলেখা

'পরের দিন ওনার পিছনে যেও এর থেকে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয় প্লিজ কাগজটা ছিঁড়ে ফেলে দাও'

জিজ্ঞাসার দিকে তাকালো বাঁশি বাজাচ্ছে জিজ্ঞাসা এখনো চোখ বোজা অদ্ভুত এক রহস্যে ঢাকা যেন সবকিছুএই লেখা, হরিহরের অন্ধকারে অত্ক্ষণ থাকাসব

পরের দিন সে যাবে হরিহরের পিছনে সোফায় বসে ভাবতে লাগলো অরণ্য সব অন্ধকারের শেষে কি থাকে

5

আজ হরিহরের পিছনে যাবে অরণ্য বেল মারার পর হরিহর দরজা খুললে অপ্রস্তুত হাসি এলো কেমন যেন ওনার হাসি হাসি কথাগুলোরও জবাব দিতে পারছিল না ঠিকঠাক নিজেকে মনে মনে খুব বকছিল সে যদি উনি কিছু বুঝে ফেলেন যদি ওনার পিছনে যেতে দেখে রেগে যান এতকিছুর সাথে জিজ্ঞাসার লেখা কাগজ মনে পড়ছিল তার একবার যেতেই হবে কিছু একটা বলে ম্যানেজ দিয়ে দেওয়া যাবে ঠিক জিজ্ঞাসার আজ চোখে আগ্রহ কি করবে সেটা লিখে জানায়নি অরণ্য একটা কাগজে ছোট করে লিখলো 'যাবো'

খুশি হল কি দুঃখিত বোঝা গেল না চোখ বুজে খালি বাঁশিটাকে টেনে নিল জিজ্ঞাসা একটু বাদেই হরিহর আস্তে আস্তে ওই ছাদের অন্ধকার কোণের দিকে এগিয়ে যাবেন, জানে অরণ্য বুকের ভিতর এক অদ্ভুত রেলগাড়ি আজকের বাঁশির সুরে না আছে দুঃখ না আনন্দ অদ্ভুত একটা সুর বাজছে নেশার মতন টিক টিক করে সময় দেখাচ্ছে হাতঘড়ি সিঁড়ির উপর পায়ের আওয়াজ উনি আসছেন একটু বাদেই এ ঘরের দরজা পেরিয়ে মিশে যাবেন অন্ধকারে চটির আওয়াজ এবার ঘর ছেড়ে যাচ্ছে দূরে সোফা থেকে ওঠার সময় এবার আস্তে করে সোফা থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে একবার পিছনে ফিরে দেখলো অরণ্য জিজ্ঞাসা চোখ বুজে বাঁশি বাজিয়ে চলেছে অন্ধকারের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে গেল সে আরেকটু এগিয়ে যেতেই হাওয়ার এক প্রবল টানে কেউ যেন ওকে ঠেলে দিল শূন্যে ছাদ থেকে পড়ে যাচ্ছে ,ভাবলো অরণ্য চোখ বুজে এল ওর মায়ের মুখ , অনন্যা এটুকুই চোখের সামনে এলো অন্ধকার গিলে নিল সবটুকু

6

দুপাশের রগে প্রবল ব্যথা নিয়ে চোখ খুলল অরণ্য অন্ধকার কাটেনি এখনো বাঁশির আওয়াজ এখন বেশ খানিকটা দূরে মাথায় প্রবল ব্যথা খানিকক্ষণ বুঝতে দিচ্ছিল না কিছু উঠতে গিয়ে টের পেল হাতের তলায় ঘাস অন্ধকার সয়ে এলে দেখতে পেল খানিকটা দূরে হরিহরবাবুর বাড়ির থেকে ভেসে আসছে বাঁশি এখানে কি করে এলো সে আর ঘাস ই বা এলো কোথা থেকে এ মাঠে হরিহরবাবুর বাড়ির পাশের জংলা জমিতে রাতারাতি মাঠ গজিয়ে উঠতে পারে না কোনোভাবে ছাদ এর সেই প্রবল হাওয়ায় তার তো পড়ে যাওয়ার কথা নীচে তবে কি সে মারা গেছেহরিহরবাবুর বাড়ি একরকমওপাশে চন্দন দের বাড়ি সেটাও রয়েছে একটু এগিয়ে গেলে নিজের বাড়িটাও খুঁজে পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই কিচ্ছু না বুঝে একটু একটু করে এগোতে লাগলো অরণ্য মাথার যন্ত্রণা কমেনি এখনো রাস্তাগুলো অদ্ভুত ভালো সাজানো অনাদিদের বাড়ির পাশে জঞ্জালের বড় গাড়িটাও নেই মারা গেছে নিশ্চয়ই এটাই ভাবলো অরণ্য কারণ ছাদ থেকে পড়লে কাটা ছেঁড়া , ভাঙা দেহ থাকতো সে সুস্থ দেহের কোথাও কোন দাগ নেই প্রবল নেশার মত মাথা ধরে আছে খালি খানিকটা দূরে কে যাচ্ছে খুব চেনা লাগছে মেয়েটাকে মেয়েটা ডানপাশে কি একটা দেখতে মুখ ঘোরালো খানিকক্ষনের জন্য সময় দাঁড়িয়ে গেল যেন দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই মাথার পিছনে খুব ভারী কিছু লাগলোঅন্ধকার আবার নেমে আসছে চারপাশে অন্ধকারের মধ্যেই একটা হাসিমুখ বলছে 'তুই একটা পাগল' অন্ধকার গিলে নিলো তাকেও

জ্ঞান পুরোপুরি না ফিরে আসলে যে আধা ঘুমন্ত অবস্থায় লোকে বুঝতে চায় কি হচ্ছে কিন্তু বুঝতে পারেনা কিছুই অরণ্যের এখন সেই অবস্থা পা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কেউ তাকে যেদিক টা মাটিতে ঘষে চলেছে সেদিকে মুখের পাশে এবং চোখের কোণে যেটা জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে আছে সেটা যে রক্ত, সে নিয়েও কোন সন্দেহ নেইপিঠমোড়া করে হাত দুটো বাধা বলে মাথার পিছনে হাত দেওয়া যাচ্ছে না মোক্ষম মেরেছে এখন খুব ঝটকা দিয়ে নিজেকে ছড়িয়ে নিলেও যাওয়া যাবে না বেশিদূর এটা ভেবেই ছটফট করলো না আর অরণ্য শুধু খেয়াল করতে চেষ্টা করলো জায়গাটা ঠিক কোথায় এ জায়গাটা অন্ধকার খুব দূরে দূরে আলো বাড়িগুলোও সরে যাচ্ছে আস্তে আস্তে অনেক দূর নিজেকে খুব অসহায় লাগলো অরণ্যের অনেকক্ষন ওভাবে আসার পর একটা খুব সাদা আলোর মাঝে দাঁড়ানো বড় বাড়ির গেটের সামনে এসে ওকে ঘাড় ধরে একটু উপরে তুলে নিল কেউ অরণ্য বুঝলো এটা যেই হোক তাকে মারতে চায় না ওই এবড়ো খেবড়ো সিঁড়ি দিয়ে যদি ওকে টেনে হিঁচড়ে তুলতো তাহলে আর মুখ বা হাতের কিছু থাকতো না কিন্তু এখনো ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ দেখা সম্ভব নয় যদি এতকিছুর পিছনে হরিহরবাবু থাকেন তাহলে তিনি কেন করছেন এসব বুঝতে পারলো না সে একটা অপরিস্কার ঘরে ফেলে দেওয়া হল তাকে অন্ধকার অবস্থাতেই বোঝা যাচ্ছে এলোমেলো জিনিসপত্র ছিটানো চারপাশে পাশের ঘরে একটা আলো জ্বললো এবার বেশ খানিকক্ষণ বিভিন্ন আওয়াজের পর পায়ের শব্দ এবার ওর দিকে কেউ এঘরে লাইট জ্বেলে দিল এতক্ষণ অন্ধকারে থাকায় চোখ ঝলসে গেল মুহূর্তের জন্য তারপর ওকে টেনে ধরে বসিয়ে দেওয়া হল চেয়ারে

'আপনি এসব কেন করছেন?'

ওর খুব রাগ রাগ প্রশ্নকে পাত্তা না দিয়ে হরিহরবাবু বললেন,

'আমার পিছনে না এলেই পারতে এত কৌতূহল কি তোমার নিজের হল? না জিজ্ঞাসা বলল?'

চুপ করে থাকাটাই ঠিক মনে করল অরণ্য শুধু মনে হল হাত খোলা থাকলে আর এত কথা বলার সুযোগ পেত না হরিহর

'যাকগে নিজের পায়েই যখন কুড়ুল মারলেথাকো এখানে তোমার বাবাকে আমি জানিয়ে দেব ছেলে ঠিক সময়ে বেরিয়ে পড়েছিল আমার বাড়ি থেকে ফেরেনি?'

বলে sarcasm মেশা এক অদ্ভুত ক্রূর হাসি দিয়ে আবার পাশের ঘরে চলে গেল হরিহর

আলো নিভিয়ে দেওয়ার সময় বাইরে থেকে আবার হাসির আওয়াজ

'ভালো থেকোgood night'

ভয় আসছিল না প্রবল রাগে চিৎকার করতে ইচ্ছে হচ্ছিল

কালো বাড়িটায় কেউ শোনার মত নেই

7

চারদিন কেটে গেছে বন্দীদশায় হরিহর আসে খাবার দেয় সঙ্গে করে এক বড়সড় চেহারার লোক আসে সেদিন ওকে এই বোধহয় টেনে এনেছিল হাত খুলে দিলে যাতে অরণ্য পালাতে না পারে তাই বোধহয় এই পালোয়ান অরণ্য এর মধ্যে খেয়াল করেছে ঘরটা বড় আলো পুরো ঘরটায় পৌঁছয় না পাশের ঘরে একদিন উঁকি মেরে দেখার সুযোগ পেয়েছিল ও ঘরটা অনেকটা কিচেন এর মত কয়েকটা এমার্জেন্সি লাইট, বাটি , কড়াই এইসব পালোয়ানের সাথে কথা বলে দেখতে চেষ্টা করেছে অনেক সে শুধু হ্যাঁ আর না ছাড়া কিছু বলে না তাই চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছে অরণ্য খাবার এনে দিলে ও ভদ্র বাচ্চার মত খায় তারপর ওর হাত বেঁধে ওরা আবার চলে যায় ওরা জানে হাত আর পা বাধা থাকলে হামাগুড়ি দিয়ে বেশিদূর যেতে পারবে না অরণ্য ওরা শুধু আলো নিভিয়ে চলে যায় সেদিনও তাই হলশুধু পাশের ঘরে আলো নেভাতে ভুলে গেল পালোয়ানচলে যাওয়ার পরে বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করলো অরণ্য ওরা ফিরে আসে কিনা দেখার জন্য তারপর দেয়ালে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে উঠতে চেষ্টা করলো অনেকদিন ধরে সে কায়দাটা রপ্ত করতে চেষ্টা করছে ওঠার পর ব্যাঙের মত ঝাঁপ মেরে মেরে এগোতে হবে পড়ে যাওয়ার ই চান্স বেশি তবু দু একবার লাফাতে পারলো সে ঘরের দরজায় কাছে গিয়ে পড়ে যাওয়ায় মাথা ঠুকে গেল দেয়ালে কিন্তু আজকে সে থামবে না নাহলে এখানে পচে মরতে হবে সারাজীবন আবার দেয়ালে ভর আবার খানিকটা ঝাঁপ দশ বারের চেষ্টায় সে পৌঁছল কিচেন অবধি এমার্জেন্সি লাইটের তাক কোনদিকে সে জানতো তার তলায় কিছু পুরোনো ছুরি পড়েছিল কদিন আগে আন্দাজে সেদিকে ঝাঁপাতে গিয়ে টেবিলে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল সে এবার আর চারপাশে কিছু নেই হামাগুড়ি সম্বল একটু একটু করে সে যখন পৌঁছল নিচের তাক এর কাছে, তখন আর একটুও দম বাকি নেই শরীরে শুয়ে শুয়ে জোরে জোরে দম নিচ্ছিল সেফুসফুসের সব হাওয়া যেন শুষে নিয়েছে কেউ মিনিট পাঁচেক ঐভাবে থাকার পর একটা আওয়াজে মনে হল ওরা ফিরে আসছে আবার প্রাণপণে নিজেকে টেনে তাকের দিকে নিয়ে গেল সেবুকের ভিতর হাতুড়ি পড়ছে এই বুঝি কেউ আবার ঘাড় ধরে তুলে নিয়ে গেল নাহ কেউ নেই পড়ে থাকা ছুরিটা অবশেষে খুঁজে পেল সে পিছনে হাত বাঁধা থাকায় না দেখে কাটতে হচ্ছিল দড়ি মনে হচ্ছিল এভাবে ঘষতে ঘষতে লেগে যাবে অনন্তকাল হাত কাটছে পুরো একঘন্টার চেষ্টায় নিজের হাতের অনেকটা আর দড়ি কেটে বেরোল সে পায়ের দড়ি খুলতে সময় লাগলো না বেশি একটা টর্চ খুঁজে পাওয়া গেল ঘরটা ভালোভাবে দেখলো সে এবার এদিক ওদিক পরে থাকা কিছু যন্ত্রপাতিটিনের ক্যান জলের বড় পিপে কিছু ফেলে রাখা খাবারও পাওয়া গেল খিদে নেই বেরিয়ে যাচ্ছিল দেখা গেল এর পাশেও ঘর আছে একটা সেখানে আলো জ্বলছে কৌতূহল বড় খারাপ জিনিস বিশেষত মুক্তির পর কেউ থাকতেও পারে এতদিনের রাগ থেকে কাউকে ঘায়েল করার ইচ্ছাটাকে দমাতে পারলো না অরণ্য একটা হাতুড়ি আর টর্চ নিয়ে এগিয়ে গেল পাশের ঘরের দিকে দরজা আস্তে ঠেলতেই খুলে গেল অনেকটা একটা বড় সোফায় একটা মানুষ ঘুমোচ্ছে অকাতরে পাশ ফিরে মুখ দেখা যাচ্ছে না ঘরের মাঝে একটা টেবিলে অনেক কাগজ বই মানুষটির পা বাঁধা ইনিও বন্দী একটু এগিয়ে লোকটার গায়ে টর্চের খোঁচা দিল অরণ্য পাশ ফিরতেই চমকে দু এক পা পিছিয়ে গেল তারপর হাতুড়ি শক্ত করে ধরে বলল

'কোনোরকম কায়দা করলেই হাতুড়ির মোক্ষম বাড়িতে আপনার মাথা ফাঁক হয়ে যাবে'

খুব শান্ত স্বরে লোকটা বলল

'তুমি যে ভাবছো , আমি সে নয়'

অরণ্য একটু এগিয়ে দাড়িতে হাত দিয়ে জোরে টানতেই লোকটা চেঁচিয়ে উঠলো

আসল দাড়ি একদিনে এ দাড়ি গজাতে পারে না কে এ?

অবিকল হরিহরের মত দেখতে লোকটার সামনে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো অরণ্য

8

পালিয়ে এসেছে ওরা অনেকক্ষণ হল শহরের রাস্তায় গেলে হরিহরের সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে বলে পিছনের এক রাস্তায় চলা শুরু করেছে এরা অরণ্য আর নতুন হরিহর প্রশ্ন অনেক কিন্তু দাঁড়ানো যাবে না এখন নতুন হরিহর বলেছে একটা নিরাপদ আস্তানা আছে সেখানে সব প্রশ্নের জবাব পাবে অরণ্য বিশ্বাস করেনি অরণ্য হাতুড়িটা হাতে খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে তাই ওর না বিশ্বাস করাটা নতুন হরিহরও পেরেছে বুঝতেকিছু বলেনি অনেকদূর আসার পর একটা ছোট্ট ঘর দেখা গেল কুঁড়েঘরের মত করা কিন্তু পাথরের দুজনে ঘরের মধ্যে ঢুকতে একটা ছোট্ট দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন হরিহর

'কতদিন ভেবেছি এই ঘরে আর ফিরে আসা হল না কতদিন পর..'

কথা বলার সাথে গলাও ধরে গিয়েছিল বোধহয় ভদ্রলোকের চোখের জল মুছতে দেখলো অরণ্য

'তোমার নাম কি?'

এবার ওর দিকে ঘুরে প্রশ্নটা করেছেন ভদ্রলোক নাম বলার পর বললেন

'আমার নাম তুমি জানোই না আমি সে নয়, তুমি যাকে চেন এবং যার জন্য শক্ত করে ধরে রেখেছ হাতুড়ি আমি তার ভাই বা একই রকম দেখতেও কেউ নয় আমি হরিহর মুখার্জী'

মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে অরণ্যের

'তবে অন্যজন কে?'

ওর মুখ দেখে উনি বোধহয় বুঝেছিলেন যে উনি যা বলছেন একটুও মাথায় ঢুকছে না অরণ্যের উনি বলতে শুরু করলেন

'দেখো, এখন যেগুলো বলছি সেগুলো বিশ্বাস করা কঠিন কিন্তু আমি তোমাকে প্রমাণ দিতে পারিতথ্য গুলো বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য এখনো প্রমাণিত না হলেও সুদূর ভবিষ্যতে হয়তো কোন বিজ্ঞানী হয়তো এই থিওরি প্রমাণ করে দেখাবেন '

এই অবধি বলে ভদ্রলোক একটা কাগজে অনেকগুলো গোল আঁকলেন সবকটাই একে অপরকে জড়িয়ে আছে

'এবার দেখ এগুলোকে যদি বুদবুদ ধরে নাও তাহলে সব বুদবুদ একে অপরের সাথে আছে কিন্তু কোনটা কোনটাকে ছাড়িয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে না অথবা overlap করছে না এবার ধরে নাও এর মধ্যে একটা বুদবুদ হল আমাদের পৃথিবী যেখানে আমরা এখন আছি

এবার ভাবো ঠিক একই রকম একটা পৃথিবী আমাদের পাশাপাশি একই রকম ভাবে আছে কিন্তু overlap করছে না বলে আমরা সেই পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না বা দেখতে পারছি না ওই পৃথিবীকে'

এটুকু বলে ভদ্রলোক থামলেন একটু দম নিতে নাকি অরণ্যের হা হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকাতে বোঝা গেল নাআবার শুরু করলেন একটু থেমেই

'এই প্রত্যেক পৃথিবী একে অপরের রেপ্লিকা কিন্তু প্রত্যেক পৃথিবীতে যদি একই সময়ে একই জিনিস ঘটে তাহলে এই প্রত্যেক পৃথিবী submerged হয়ে যাবেএবং তার ফলে একটি single পৃথিবী হতে পারবে না সে ক্ষেত্রে অনেক কিছু ঘটতে পারে সময়ের গতি থেমে যেতে পারেএমনকি পৃথিবীর ধ্বংস হওয়া ও অসম্ভব কিছু নয়'

'সেটা কিভাবে? ' বিস্ময় কাটিয়ে প্রশ্ন করলো অবশেষে অরণ্য

' প্রতিটা পৃথিবীতে সময় আলাদা ভাবে চলছে কিন্তু যদি সব পৃথিবী submerged হতে হয় তাহলে সবার সময় মিলে যেতে হবেসেটা করার জন্য সব পৃথিবীর সময় কে দ্রুততায় এক জায়গায় আসতে হবে evolution রাতারাতি হওয়ার ফলে ধ্বংস হয়ে যেতেই পারে কোন একটা পৃথিবী অথবা অনেক পৃথিবী'

'এখন কিভাবে আলাদা চলছে তাহলে পৃথিবীরা? '

'Good question দেখো সময় একটা ফ্যাক্টর এছাড়াও এই পৃথিবী অন্য পৃথিবী থেকে আলাদা হয়ে যায় আরো এক জায়গায় তুমি যেই পৃথিবীতে থাকো সেই পৃথিবীর সবাই , যতজন কে তুমি চেনো জানো এবং চেনো না, সবাই আছে এই পৃথিবীতে শুধু তাদের সিদ্ধান্তগুলো বদলে যায় জীবন গুলো বদলে যায় ওই পৃথিবীতে যদি তুমি চা খেতে পছন্দ করো তাহলে এই পৃথিবীর তুমি চা পছন্দ করবে না একটুও শুধু এরকমই নয় ওই পৃথিবীতে কেউ একসাথে থাকলে এই পৃথিবীতে হয়তো তাদের মধ্যে যোগাযোগ সম্ভবই নয় এভাবে দুটো আলাদা পৃথিবী নিজেদের ভারসাম্য রক্ষা করে আর শুধু দুটোই নয় এরকম সমান্তরাল পৃথিবী আরো অনেক লক্ষ কোটিও হতে পারে মানুষ এখনো সন্ধান পায়নি সেসবেরআমি শুধু একটা জায়গাই বুঝতে পারছি নাতুমি কিভাবে এলে এখানে'

প্রথম থেকে সব গল্প হরিহরকে খুলে বললো অরণ্য জিজ্ঞাসা,ছাদ ,হাওয়ার ধাক্কাসব জিজ্ঞাসার কথা শুনে emotional লাগলো হরিহরকেপ্রশ্ন করার আগেই শুরু করলেন বলা

'ফিজিক্সের প্রফেসর ছিলাম কলেজের সাথে নিজস্ব কিছু রিসার্চ করতাম পড়াশুনো নয় নিতান্তই ভালোবাসায় paralal universe theory ছেলেবেলা থেকেই আমাকে খুব টানত সায়েন্স ফিকশনের ভক্ত ছিলাম ভাবতাম যদি এরকম দুটো জায়গা থাকে তাহলে নিশ্চয় কোনো দরজা বা যোগসূত্র থাকবে যেখান থেকে এক পৃথিবী থেকে অন্য পৃথিবীতে আসা যাবে কোন যন্ত্র বা কোন পথের সন্ধানে পড়তে থাকলাম হাজার বই কিছুই পেলাম না পাগলের মত অবস্থা বাড়ির লোক পাগলাগারদে দেয় প্রায় তাই পড়াশুনো ছেড়ে একদিন বিশ্রাম নিচ্ছিলাম দেখলাম পড়ার বইয়ের মাঝে রূপকথার বইঅনেক গল্প পড়ে একটা গল্পে চোখ আটকে গেল আমার তুমি হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার গল্প শুনেছ?'

প্রশ্নটা তার দিকে 'হ্যাঁ হ্যামলিন শহরের ইঁদুরের উৎপাত দূর করতে সবাই হিমশিম খাচ্ছিল সেইসময় এক বাঁশিওয়ালা এসে দাবি দেয় সে ইঁদুর থেকে মুক্ত করতে পারবে শহর তার জাদুবাশির সুরে সব ইঁদুর এসে ঝাঁপ দেয় নদীতে'

'হ্যাঁ কিন্তু আসল গল্প তার পরে প্রতিশ্রুতি ছিল ইঁদুর মুক্ত করলে পয়সা পাবে সে তা না দেওয়ায় সে শহরের সব বাচ্চাকে নিয়ে এক গুহায় ঢোকে এবং তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না শুধু 3 জন বাচ্চা বেঁচে যায় এর থেকে তোমার কি মনে হয়?'

'গল্পে বলা ছিল তারা হারিয়ে যায় একেবারে' অরণ্য বললো

' ঐখানেই আমার সন্দেহ হয় প্রথম অত বাচ্চা নিয়ে হারিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় আমি folklore পড়তে শুরু করি বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য লেখা এবং রং চড়ানো গল্প থেকে মূল অংশ বার করে নিয়ে বুঝতে পারি বাঁশিটাই সেই যন্ত্র বাঁশিটা বাজলে একটা পোর্টাল খোলে টাইম লুপ বলতে পারো বাঁশিওয়ালা সেই পোর্টাল দিয়েই বাচ্চাদের নিয়ে যায় অন্য জগতে তাই আর পাওয়া যায় না তাদের'

' এতো আপনার থিওরি এতে সত্যতা কোথায়? '

'সত্যতা? 'এবার একটু রাগত দেখায় প্রফেসরকে

'তুমি জানো কতদিন আমি ঘুরে বেড়িয়েছি এর পিছনে হ্যামলিন শহরে এক গির্জার কাঁচেও সেই বাঁশিয়ালার ছবি ছিল গির্জা পরে ভেঙে যায় তাই সেই কাঁচের জানলা আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়কিন্তু...'

খক খক করে কয়েকবার কাশলেন প্রফেসর হরিহর রাগ কন্ট্রোলের চেষ্টায় না পরের কথাগুলো বলার জন্য জানা নেইকিন্তু পরের কথাগুলো যা বললেন তা যেন বাজ

'কিন্তু তারপর বিভিন্ন জায়গায় পড়ে জানতে পারলাম বাঁশিওয়ালা ওই একজন নয় বিভিন্ন সময়ে এক জাদুবাশির উল্লেখ পাওয়া গেছে বিভিন্ন লেখায় এবং তারা আলাদা আলাদা মানুষ কখনো মেয়ে, কখনো ছেলে তাদের গল্প কেউ পাত্তা দেয়নি কারণ সেগুলোকে রূপকথা বানিয়ে দেওয়া হয়েছেছেলেভুলানো গল্প বানিয়ে দেয়া হয়েছে যেটা হতে পারতো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কারআর আমি কেন বিশ্বাস করি যে গল্পে জানতে চাও? কারণ আমি খুঁজে পেয়েছিলাম এরকম একজনকে '

অরণ্যের গলার কাছটা শুকিয়ে আসছে যেটা ও ভাবছে সেটাই কি..

' জিজ্ঞাসা ওই বাঁশিওয়ালাদের একজন অরণ্য রুপকথার বাঁশিওয়ালার মতোই'

9

গলার শুকনো ভাবকে কাটিয়ে কোনোভাবে জিজ্ঞাসা করলো অরণ্য

'কিভাবে পেলেন ওকে?কোথায়?'

'আমার theory তে কেউ বিশ্বাস করছিল না আমার সঞ্চয় ছিল কিছু কিন্তু বুনো হাস ধরার চেষ্টায় সব নষ্ট করে দেয়ার শখ ছিল না তাই বিভিন্ন দেশে আমার কিছু বন্ধু আছে তাদের সাথে যোগাযোগ করি এবং বলি এরকম বাঁশি সংক্রান্ত কোন মিরাকলের খবর পেলেই যেন সঙ্গে সঙ্গে জানায় আমাকে বন্ধুরাও মজা পেয়েছিল ভেবেছিল মজার খেলা একটা ওরাও জানতো এরকম দু চারবার ভুয়ো খবরের পর একজন জানায় মেক্সিকোতে এরকম একজন মহিলার খোঁজ পাওয়া গেছে বাঁশির সুরে যে যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিতে পারে মানুষের সেখানেই প্রথম দেখি জিজ্ঞাসাকে ওর পিছু নিতাম লুকিয়ে একদিন দেখি একদল ছেলেমেয়ে মারামারি করছিল,ও রাস্তা পাচ্ছিল না পেরিয়ে যাওয়ার খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে বাঁশি বের করলো ও বিশ্বাস করবে না বিপুল উত্তেজিত দুদল জনতা হাতে লাঠি ,ইঁট নিয়ে একে অপরকে মারার জন্য তৈরি হচ্ছিল মুহূর্তে সব চুপ একে ওপরে মাথা দোলাচ্ছে একই ছন্দেএকই রকম ভাবেওর কাছ থেকে কেউ পয়সা ছিনিয়ে নিতে আসলে বাঁশি বাজায়দূরে চলে যায় সে চোর নিজে হেঁটে বেশ কিছুদিন এভাবে পিছু নেয়ার পর একদিন দেখলাম বাঁশিতে ভয়ের সুর বাজছে আমার মাথাতেও যেন ছড়িয়ে গেছে সে ভয়ের সুর অনিচ্ছাস্বত্বেও হেটে যাচ্ছি ওরই দিকে বুঝলাম বাঁশির এবারের লক্ষ আমিই সামনে গিয়ে দাঁড়ালে সে বাঁশি ছেড়ে প্রশ্ন করলো খাঁটি ইংরেজিতে কথোপকথন চলার সময় বাঁশি ধরে রেখেছিল হাতে ভুল কিছু লাগলেই সুর বাজবে আবার এরপর কথা হয় অনেক মানুষ হিসেবে আমাকে ভালোলাগে ওর আমার কাছ থেকে রূপকথা হয়ে যাওয়া বাঁশির সব গল্প শোনে আর হাসে একদিন ওকে জিজ্ঞাসা করি সাহস করে আমার থিওরি র ব্যাপারে ও তখন আমাকে বলে ওরা এই দুই পৃথিবীর মধ্যে ঘোরাফেরা করতে পারে এমনকি অন্যকে নিয়েও যেতে পারে কিন্তু সেটা ওদের সাথেই যেতে হবে'

'কিন্তু জিজ্ঞাসা তো এদিকে আসে না ও বাঁশি বাজায় আপনার মত দেখতে হরিহর এদিকে আসে যদি বাঁশি ছাড়া এটা সম্ভব না হয় তাহলে এটা কিভাবে হচ্ছে'অরণ্য প্রশ্নটা না করে থাকতে পারলো না

'বাঁশির কোন ভাঙা অংশ বা টুকরো যদি থাকে তাহলে সে ওই পোর্টালের ভিতর দিয়ে আসা যাওয়া করতে পারবে পোর্টাল খুলতে পারবে নাকিন্তু কেউ খুলে দিল যাওয়া আসা করতে পারবে'

'কিন্তু আমার কাছে তো সেরকম কিছু নেই আমি তাহলে কি করে?'

এবার চিন্তিত দেখালো প্রফেসরকে 'কিচ্ছু ছিল না? মনে করে দেখ তো এরকম তো সম্ভব নয়জিজ্ঞাসা কিছু দিয়েছিল কি তোমায়? মনে কর'

'না সেরকম তো কিছু..'বলে ওর মনে পড়লো যাবো লিখে দেখিয়েছিল যে কাগজে জিজ্ঞাসাকে সেই কাগজটা রয়ে গেছে এখনোকাগজটা প্রফেসরের দিকে এগিয়ে দিতে তিনি হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখলেন অনেকক্ষন

'নাহএ তো সাধারণ কাগজ ' বলে ওকে ফেরত দিতে গিয়ে ইউরেকা বলে লাফিয়ে উঠতে যাচ্ছিলেন কাগজের এক কোণ থেকে সরু একটা পিনের মত কিছু বার করে আনলেন

'এই দেখ তোমার অজান্তে জিজ্ঞাসা এতে নিশ্চয়ই ঢুকিয়ে দিয়েছিল এটা এত ছোট বলেই তুমি পোর্টালের হাওয়ার অতিরিক্ত টান বুঝতে পেরেছো নইলে যদি আরেকটু বড় পার্ট হত তাহলে smooth হত ব্যাপারটা '

'সেসব নাহয় হল এবার বলুন আপনার ওই শয়তানি প্রতিমূর্তিকে কিভাবে খুঁজে পেলেন? আর কিভাবে বাকি ঘটনা ঘটলো?'

দীর্ঘস্বাস নিয়ে বাকি কাহিনী বলতে শুরু করলেন প্রফেসর

'paralal universe নিয়ে আমার আগ্রহের কথা তো তোমাকে বলেইছি একইভাবে আমি জিজ্ঞাসাকেও বলতে শুরু করি আমাকে অন্য পৃথিবী দেখানোর কথাপ্রথমে রাজি হয়না অনেক সাধ্য সাধনার পর সে সায় দেয় একটাই শর্ত আমি থেকে যেতে পারবো না অন্য পৃথিবীতে আমি সানন্দে রাজি হই আমাকে সে নিয়ে যায় তোমাদের পৃথিবীতেআমার চিরকাল ইচ্ছা ছিল অন্য পৃথিবীর আমির সাথে মুখোমুখি হওয়ার এভাবেই আমি ঐ হরিহরকে খুঁজে পাই বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ায় প্রথমে ভয় পেলেও পরে সে আমার কথা শুনে বোঝে ব্যাপারটা খুব ভালো ব্যবহার করে আমাদের দুজনের সাথেই আমরা মাঝেমধ্যেই তোমাদের পৃথিবীতে যেতে লাগি জিজ্ঞাসার পছন্দ ছিল না তা সত্ত্বেও আমি বারবার যাই নিজের সাথে কথা বলাটা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বুঝতে পারছো কতটা exiting? অত ভালো ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে মাঝে মধ্যে আমরা ওখানেই থেকে যাই এরকমই এক দিনে আমাদের ঘুমের মধ্যে বাঁশির উপরে করা ময়ূরের ডিজাইন ভেঙে নেয় সে অমানুষভাঙা বাঁশির টুকরো যার কাছে থাকবে জিজ্ঞাসার তার কথা শোনা ছাড়া উপায় নেই তাকে বাঁশি বাজিয়ে পোর্টাল খুলতে হয় এবং সেই পাষন্ড আমাকে নিয়ে চলে আসে এখানে অতবড় বাঁশির অংশ থাকায় দুজনের পোর্টাল পেরিয়ে আসতে অসুবিধা হয়নি কোন তোমাদের পৃথিবীতে ওর কোন নাম নেইকিন্তু এখানে আমার একটু হলেও নাম আছে এটা সে জানতো আমাকে প্রতারক সাজিয়ে ওই বাড়িতে নিয়ে রাখেযেখান থেকে দুজনে পালালাম সব গল্প এখন তোমার সামনে কি করা উচিত বলে মনে হয় তোমার?'

বিশ্ব মহাবিশ্ব সমান্তরাল পৃথিবী মিথ সব পেরিয়ে অরণ্যের মনে পড়লো জিজ্ঞাসার চোখ বন্ধু ভেবেছিল ওকে সে ওই হরিহর না জানে কিভাবে ব্যবহার করেছে ওর সাথে বিশ্বের সমস্ত রহস্যের মধ্যে ঘুরতে থাকা একলা প্রাণ, তাকেও সুযোগ বুঝে ব্যবহার করতে ছাড়েনি হায় রে মানুষ অবাক বিস্ময়ে যাকে দেখে মুগ্ধ হওয়ার কথা, তাকে ই বন্দী করে নিজের জোর দেখাচ্ছে জিজ্ঞাসাকে মুক্ত করতে হবে বিজ্ঞানের স্বার্থেও ধরে রাখা চলবেনা তাকে গিনিপিগ বানিয়ে দেবে তাহলে ওকে নগন্য মানুষেরা অন্য হরিহরের জন্য রাগ তৈরি হচ্ছে মাথায়

'একটা প্ল্যান বানাতে হবে প্রফেসর জিজ্ঞাসাকে ছাড়ানোর'

প্রাজ্ঞ লোকটির মুখেও হাসি ফুটে উঠলো শুনে

10

'আপনাদের বাড়ির পিছনে যে গলি আছে সেখানে বাড়ির পিছনের গেট আমি আপনাকে গেট টপকাতে সাহায্য করবো তারপর আপনি নিজের ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করবেন আপনার শত্রুর বাড়ি তে যদি আর কেউ থাকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আপনার তার আপনাকে চেনে, সুতরাং অসুবিধে হবে না কোন পালোয়ানের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি সুযোগ বুঝে ওর মাথায় ডান্ডা মারতে হবে একটা আমাকে মেরেছিল হেব্যি জোরে '

প্রফেসর খানিক অবাক হয়ে চেয়ে তারপর হেসে ফেললেন

'প্রথমে ভাবলাম বাড়ির পিছনের গেটের কথা তুমি কি করে জানলে তারপর বুঝলাম তুমি তোমার পৃথিবীর বাড়িটার সাথে মিলিয়ে বলছো ভালো প্ল্যান আমাকে খালি দাড়ি কামাতে হবে ওই ময়ূরের মত ডিজাইন হাতে চলে এলেই ব্যাস '

'তারপর কি করবেন সেটা ভেবেছেন? আমি কিন্তু কোন অবস্থাতেই ওকে বিজ্ঞানের স্বার্থে বিজ্ঞানের হাতে তুলে দিতে পারব না' অরণ্য বললো

' কিন্তু এটা কত বড় পাওয়া সেটা তুমি বুঝতে পারছো? হারিয়ে ফেলবো এভাবে?'

'আমার মতে প্রফেসর কিছু জিনিস বিজ্ঞানের না জানাই ভালো আরো পরে কোন একসময় হোক সেটা আবিষ্কার নিজের খেয়ালে আপনি তো অবিস্কারই করতে গিয়েছিলেন কি পেলেন ওই বা আপনাকে বিশ্বাস করে ওই পৃথিবী দেখিয়ে কি পেল তাই থাক বিজ্ঞানের কথা নাহয় অন্য একদিন ভাবা যাবে'

অরণ্যের কথা শুনে প্রফেসর গুম হয়ে গেলেন খানিকক্ষণ তারপর বললেন,

'ঠিক বলেছ আমার থিওরির সত্যতা যাচাই করতে বেরিয়েছিলাম সে হয়েছে জিজ্ঞাসার কল্যাণে ওকে এই কাজে বলি দিলে মানুষের অপমান'

একমত হয়ে দুজনে বেরিয়ে পড়া গেল ঠিক করা হয়েছিল প্রথমে যাওয়া হবে সেই বাড়িতে যেখানে দুজনে আটকে ছিলেন সে বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে দেখা গেল বাড়ির ভিতরে আলো লুকিয়ে খানিকক্ষণ নানাদিক থেকে দেখে বোঝা গেল একজনই আছে ভিতরে

'যদি দেখি পালোয়ান আপনি যাবেন যদি হরিহর হয় তাহলে আমি ' ফিসফিস করে বললো অরণ্য

'তারপর?' প্রফেসরের জিজ্ঞাসা

'যে যাবে সে ডিস্ট্রাক্ট করবে আর অন্যজন সেই সুযোগে মাথার পিছনে বাড়ি'

প্রফেসর যে তার পাশে বাচ্চাদের মত খুশি হচ্ছেন বুঝতে পারছিল অরণ্য দেখা গেল পালোয়ানকে বড় টর্চ হাতে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে আসছে খুব সন্তর্পণে ওর পাশ ছেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন প্রফেসর যাতে একটু দূরে থেকে আসা যায় সামনে গিয়েই খুব ধমকের স্বরে বলে উঠলেন

'এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসছিস যে?'

বেশিক্ষণ সময় নিল না অরণ্য পাশে পড়ে থাকা মোটা গাছের ডাল তুলে পিছন থেকে গিয়ে ঘুরিয়ে ছক্কা

অত বড় শরীর ওই বাড়ি অবধি নিয়ে গিয়ে বাঁধতে আরো খানিকক্ষণ গেল

এরপর প্রফেসরের বাড়ির পিছনের গেট দিয়ে প্রফেসরকে তুলে দিয়ে অন্যদিকে এগোল অরণ্য একটা কাজ বাকি থেকে গেছে এখানে বাকি কাজ সামলে নিতে পারবেন প্রফেসর

কয়েকটা বাড়ি পরেই একটা বড় গাছ তার আড়ালে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে অরণ্য দেখলো মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলো ছেলেটি কানে কানে বললো কিছু মেয়েটির মুখে লাজুক হাসি ছেলেটি চলে যাচ্ছে এবার মেয়েটা ফিরে যাচ্ছে বাড়ির দিকে অরণ্য একটু এগোল ডাকল মেয়েটি পিছন ফিরে তাকাল ওর দিকে

'আবার ফিরে এলি যে?'

'কিচ্ছু না মনে হল ফিরে আসার কথা তাই'

কানের পাশ দিয়ে চুল সরিয়ে মেয়েটির কপালে একটা চুমু খেল অরণ্য

'তুই না একটা আস্ত পাগল' হাসি ছড়িয়ে যাচ্ছে চারপাশে আর অনেকদিন পর অরণ্য দেখছে অনন্যা ঠিক আগের মতনই মিষ্টি হাসে

একটু দূরে দাঁড়িয়ে আরেকজন হাসছে ওদের দুজনকে দেখে যাকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো অবস্থায় আর কোনোদিন দেখবে ভাবতে পারেনি অরণ্য

মা ও এগিয়ে আসছে এদিকে অরণ্য পা বাড়াল চলে যাওয়ার জন্য ছলছল চোখ দেখে ওর হাত ধরেছে অনন্যা

'মনখারাপ?'

'না মন খুব ভালো'

দৌড়ে পালিয়ে যেতে হবে এখান থেকে এবার অরণ্য বুঝেছে এবার কেন ফিরে যায়না লোকে কেন যেতে চায়না ওপারের পৃথিবীর সব ভাঙা চরিত্ররা এখানে পূর্ন স্বপ্নের মত ভালোলাগা পিছুটানে ধরে রাখে তাইপালাতে হবে এসব থেকে নয়তো সেও জানোয়ার হয়ে এখানকার নিজেকে ধরে রাখবে কোথাও

প্রফেসর দাঁড়িয়ে ছিলেন প্ল্যান অনুযায়ী ওকে ফিরতে দেখে হাসলেন শত্রুকে বাগে আনতে বেশি খাটনি লাগেনি তার ময়ূরের মত অংশ ওর হাতে দিয়ে বললেন

'কোথায় গিয়েছিলে বুঝেছিলাম কোন পুরোনো ক্ষত যদি মেরামত হয়ে যায় তাই বারণ করিনিএটাও ভেবেছিলাম ফিরে নাও আসতে পারো'

ভদ্রলোকের সাথে হাত মেলালো অরণ্য আবার দেখা হবে বলতে চাইলো পারলো না প্রফেসর বললেন ,'সময় হল এখুনি শুনতে পাবে বাঁশির আওয়াজ আজ খুশি হবে জিজ্ঞাসা কারণ তোমার ফিরতে ওখানকার হিসেবমত দুটো দিনও হয়নি '

হিসেব আর জানতে চাইলোনা অরণ্য মনখারাপ

বাঁশি খুব জোরালো অথচ মিঠে সুর চোখের সামনে ঝাপসা একটা পর্দা পর্দার ওপাশ থেকেই আসছে সুর ফেরার সময় হল একটা দীর্ঘশ্বাস কতকিছু লুকিয়ে রাখে ভিতরে ফিরতে হবে এবার

ওকে ফিরতে দেখে জিজ্ঞাসা কতটা খুশি হয়েছিল সেটা বোঝা যাচ্ছিল ওর বড় বড় চোখে ময়ূরের মত অংশটা বাঁশিতে লাগাতেই জুড়ে গেল তারপরই ওকে অবাক করে ওকে বললো জিজ্ঞাসা

'অনেক ধন্যবাদ'

অপার্থিব মিষ্টি গলা

'বাঁশির কোন অংশ ভেঙে গেলেও কথা বলতে পারিনা আমরা'

'তোমরা কি?' অরণ্যের প্রশ্নের জবাবে মিষ্টি করে হাসলো জিজ্ঞাসা

'নানা সময়ে লোকে আমাদের নানা রকম নাম দিয়েছে পরী, দেবতা, রূপকথার বাঁশিওয়ালা আসলে আমরা মানুষ খুব উন্নত টেকনোলজি নিয়ে পড়াশুনো করা মানুষ আমরা নিজেদের বলি ফার্স্ট সিভিলাইজেশন তোমরা যতদূর ভাবো তার থেকেও অনেক এগিয়ে যদি কিছু থাকে তাহলে সেটাই আমাদের জগৎ'

ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে অরণ্য দেখলো রামধনু উঠেছে আকাশে

'তুমি আমাদের সভ্যতা দেখতে চাও?'

'নাহ হয়তো বিজ্ঞানী হলে আমার জবাব হত অন্যরকম হরিহর হয়তো দেখতে চাইতেন তোমাদের সভ্যতা কিছু জিনিস হয়তো না জানাই ভালো তাই থাক রামধনু দেখছো? কিছু কিছু জিনিস এরকম দূর থেকে দেখার মতোই থাকুক'

অরণ্য হাসলো বিদায়ের পালা এবার বাঁশির সুরে এখন আনন্দ মিলিয়ে গেল জিজ্ঞাসা বাঁশি বাজাতে বাজাতে  ছাদে দাঁড়িয়ে প্রানভরে নিঃশ্বাস নিল অরণ্য সে খুব খুশি

অন্য কোন পৃথিবীতে এখানেও

Comments

Popular posts from this blog

সুডুকু মেলানোর উপায়- নীলেশ

খিস্তি সুখের উল্লাসে- নীলাদ্রি

তোত্তো-চান : 'তোমোই গাকুয়েন' - একটি প্রকৃত বিদ্যালয় - শতাব্দী