এতাল বেতাল চিঠির দল - নীলাদ্রি
আমার ভীষণ চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে! সবাইকে, সব্বাইকে! যারা এমনকি পড়তে জানে না, তাদেরও! ইউনিভার্সিটি ছাড়ার পর দীর্ঘদিন যে বন্ধুটির সঙ্গে দেখা হয় না, অথচ আগে ছিল গা ঘেঁষাঘেঁষি সখ্য, তাকে চিঠি লিখি মাঝেমাঝে। মনে মনে অবশ্য! যে প্রৌঢ়ের সাথে সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা চলে, অথচ এমন অনেক কথা যা সেইসব আড্ডায় বলা হয় না, হবেও না কোনোদিন, তাকে সেসব বলতে চিঠি লিখি প্রায়ই! আবার সেই মেয়েটি, যার সঙ্গে খুব অল্প দিনের আলাপ, আর এতটাই 'অল্প' সেই দিনগুলো, যে আর দেখাই হয় না আজকাল; সেই তার বরাদ্দেও থাকে কিছু চিঠি!
আমার চিঠি এলোমেলো, অগোছালো। যাপনেও আমি অনেকটাই তাই। আমার চিঠির শুরু আর শেষ, ব্যাকরণ ক্লাসের নিয়ম মেনে আসে না! তারা হঠাৎই যখন যেমন ইচ্ছেমতো শুরু হতে পারে, আবার শেষ হওয়ারও কোনো ঠিক-ঠিকানা থাকে না! এমনও হতে পারে যে চিঠিটা কোনোদিনই শেষ হলো না!
দিনের পর দিন একই চিঠির কন্টিনিউশন! এই যেমন কলেজে ঢুকেই একজন দাদা আর এক দিদি, যারা এখন বিয়েটিয়ে করে দিব্যি সংসার করছে, তারা তখন থেকেই আমার ভীষণ প্রিয় ছিল। আমাকে তারা বলতে গেলে দত্তক নিয়ে নেয়, এমনই ভালোবাসা। কিন্তু একটা সময় পর তাদের সঙ্গে নানান ভুল বোঝাবুঝি থেকে দূরত্ব এসে গেল। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত, ওদের দুজনকেই একটা চিঠি লিখে কত যে মান অভিমান, কত খবর, কত চরাই উতরাই জানিয়ে যাচ্ছি, তার হিসেব নেই...
কলেজ ইউনিভার্সিটির দিনগুলোতে যত প্রেম, সব গুলোই চিঠিতে চিঠিময়! তখন অবশ্য গুছিয়ে চিঠি লিখতাম। মানে লেখার চেষ্টা করতাম। রবি ঠাকুর থেকে শুরু করে সুমন, ভাস্কর থেকে অঞ্জন, সবাইকে ধার করে চিঠির ওজন বাড়াতাম নির্দ্বিধায়! তখন চিঠি পেতামও প্রচুর! সেসব কাগজে যত্ন ছিল, প্রেম ছিল, শাসন থেকে ঝগড়া সবই থাকতো ইতিউতি!
মাঝেমাঝে রবীন্দ্রনাথের চিঠিগুলো মন দিয়ে পড়ি। বিশেষ করে ছিন্নপত্র আর ভানু সিংহের পত্রাবলী। সত্যি বলতে কী, ইন্দিরা দেবী আর রাণু অধিকারীকে ভীষণ হিংসা হয়! আর এই যে গুছিয়ে অগোছালো করে লেখা, এটা যে কী ভালোলাগে! আবার পাশাপাশি কারো কারো চিঠি হয় একদম সংহত, গোছানো। বু.ব তাঁর একটি লেখায় রবি ঠাকুর আর পরশুরামের চিঠির চমৎকার তুলনা করেছেন,
"রবীন্দ্রনাথের চিঠি যেমন উচ্ছল ও বর্ণাঢ্য, তাতে যেমন বোঝা গেছে কোনো সাধারণ কথাকেও কত মনোমুগ্ধকর করে বলা যায়, অলংকরণের কী অসীম সম্ভাবনা ভাষার মধ্যে নিহিত হয়ে আছে, তেমনি রাজশেখরের চিঠিতে দেখেছি ভাষা কত পরিমিত ও পরিচ্ছন্ন হতে পারে, কত অল্প কথায় সব কথা বলা যায়, অথচ সৌহার্দ্যজনিত উদ্বৃত্ত কিছু থাকে না তাও নয়।"
এই যে অল্প কথায় সব কথা বলা, এ আমার দ্বারা জীবনেও হবে না। আসলে আমার ধরণটাই মহাকাব্যিক! ধান ভানতে শিবের গাজন আমার রক্তে রক্তে। এ নিয়ে অবশ্য আমার চিন্তাও নেই। কারণ আমি জানি, আমাকে অক্ষর পিছু টাকা গুনতে হবে না! আমি এও জানি, আমার কোনো চিঠিই কোনোদিন খামের পোশাক পরে স্ট্যাম্প ছুঁয়ে পৌঁছবে না কারো হাতে...
আমার চিঠি এলোমেলো, অগোছালো। যাপনেও আমি অনেকটাই তাই। আমার চিঠির শুরু আর শেষ, ব্যাকরণ ক্লাসের নিয়ম মেনে আসে না! তারা হঠাৎই যখন যেমন ইচ্ছেমতো শুরু হতে পারে, আবার শেষ হওয়ারও কোনো ঠিক-ঠিকানা থাকে না! এমনও হতে পারে যে চিঠিটা কোনোদিনই শেষ হলো না!
দিনের পর দিন একই চিঠির কন্টিনিউশন! এই যেমন কলেজে ঢুকেই একজন দাদা আর এক দিদি, যারা এখন বিয়েটিয়ে করে দিব্যি সংসার করছে, তারা তখন থেকেই আমার ভীষণ প্রিয় ছিল। আমাকে তারা বলতে গেলে দত্তক নিয়ে নেয়, এমনই ভালোবাসা। কিন্তু একটা সময় পর তাদের সঙ্গে নানান ভুল বোঝাবুঝি থেকে দূরত্ব এসে গেল। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত, ওদের দুজনকেই একটা চিঠি লিখে কত যে মান অভিমান, কত খবর, কত চরাই উতরাই জানিয়ে যাচ্ছি, তার হিসেব নেই...
কলেজ ইউনিভার্সিটির দিনগুলোতে যত প্রেম, সব গুলোই চিঠিতে চিঠিময়! তখন অবশ্য গুছিয়ে চিঠি লিখতাম। মানে লেখার চেষ্টা করতাম। রবি ঠাকুর থেকে শুরু করে সুমন, ভাস্কর থেকে অঞ্জন, সবাইকে ধার করে চিঠির ওজন বাড়াতাম নির্দ্বিধায়! তখন চিঠি পেতামও প্রচুর! সেসব কাগজে যত্ন ছিল, প্রেম ছিল, শাসন থেকে ঝগড়া সবই থাকতো ইতিউতি!
মাঝেমাঝে রবীন্দ্রনাথের চিঠিগুলো মন দিয়ে পড়ি। বিশেষ করে ছিন্নপত্র আর ভানু সিংহের পত্রাবলী। সত্যি বলতে কী, ইন্দিরা দেবী আর রাণু অধিকারীকে ভীষণ হিংসা হয়! আর এই যে গুছিয়ে অগোছালো করে লেখা, এটা যে কী ভালোলাগে! আবার পাশাপাশি কারো কারো চিঠি হয় একদম সংহত, গোছানো। বু.ব তাঁর একটি লেখায় রবি ঠাকুর আর পরশুরামের চিঠির চমৎকার তুলনা করেছেন,
"রবীন্দ্রনাথের চিঠি যেমন উচ্ছল ও বর্ণাঢ্য, তাতে যেমন বোঝা গেছে কোনো সাধারণ কথাকেও কত মনোমুগ্ধকর করে বলা যায়, অলংকরণের কী অসীম সম্ভাবনা ভাষার মধ্যে নিহিত হয়ে আছে, তেমনি রাজশেখরের চিঠিতে দেখেছি ভাষা কত পরিমিত ও পরিচ্ছন্ন হতে পারে, কত অল্প কথায় সব কথা বলা যায়, অথচ সৌহার্দ্যজনিত উদ্বৃত্ত কিছু থাকে না তাও নয়।"
এই যে অল্প কথায় সব কথা বলা, এ আমার দ্বারা জীবনেও হবে না। আসলে আমার ধরণটাই মহাকাব্যিক! ধান ভানতে শিবের গাজন আমার রক্তে রক্তে। এ নিয়ে অবশ্য আমার চিন্তাও নেই। কারণ আমি জানি, আমাকে অক্ষর পিছু টাকা গুনতে হবে না! আমি এও জানি, আমার কোনো চিঠিই কোনোদিন খামের পোশাক পরে স্ট্যাম্প ছুঁয়ে পৌঁছবে না কারো হাতে...
অসাধারণ নীলাদ্রি। চালিয়ে যা...
ReplyDeleteWords are the mirror of self.. Is it?... I don't know how to write letters... But today I know someone who can write letters... Without envelope without postage stamp I am also waiting for a letter... Keep it up.. :)
ReplyDelete